ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারের এলএ শাখার ভূমি অধিগ্রহণ 

পেকুয়ায় ১২ লক্ষ টাকা পাইয়ে দিতে স্ট্যাম্পে নিল ঘুষের ৪ লক্ষ টাকা!

পেকুয়া প্রতিনিধি :: পেকুয়ায় অধিগ্রহণের ১২ লক্ষ টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের জন্য এ অংকের টাকার ঘুষ দিয়েছে স্বামী-স্ত্রী।

অভিযোগে জানা গেছে, কক্সবাজারের এলএ শাখার কর্মকর্তাদের কথা বলে ঘুষ নিয়েছে ওই চক্র। ননজুড়িসিয়াল স্ট্যাম্পমূলে এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। নোটারীর মাধ্যমে এফিডেভিট মূলে এ চুক্তিনামায় স্বাক্ষরও নেয়া হয় ।

সুত্রে জানা গেছে, সরকার মগনামায় সাবমেরিন নৌঘাটি স্থাপন করে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সাবমেরিন নৌঘাটির জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু করে। সাবমেরিন নৌঘাটিতে মগনামা কাজী বাজারের নজির আহমদের পুত্র নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী খালেদা বেগমের ৬০ শতক দালিলিক সম্পত্তিও অধিগ্রহণ করা হয়। এলএ শাখায় অধিগ্রহণ মামলা রুজু আছে। যার নং ০২/২০১৫-১৬ ইং। বিএস ৫৪৮ ও ৫৫৬ খতিয়ান থেকে এ জমি অধিগ্রহণভূক্ত করে।

মগনামায় বনৌজা শেখ হাসিনা নৌঘাটি স্থাপনের জন্য ওই বছর ৪৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। পরবর্তীতে আরো বেশ কিছু জমিও অধিগ্রহণ করে। ওই বছর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মগনামায় এসে ভূমির মালিকদের নিয়ে সমাবেশ করে। মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে কক্সবাজারের বিদায়ী জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকদের নিকট হস্তান্তর করেন অধিগ্রহণের চেক।

এ দিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, ৬০ শতক জমির ক্ষতিপূরণ পাননি নুরুল ইসলাম ও খালেদা বেগম দম্পতি। দীর্ঘ সময় থেকে তাদের মামলাটি অধিগ্রহণ শাখায় নিস্পত্তি হয়নি। অধিগ্রহণের ১২ লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তর হয়নি। এতে করে ওই দম্পতি টাকা উত্তোলনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। এরই মধ্যে নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী খালেদা বেগমকে মামলার অনুকুলে ১২ লক্ষ টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এলএ শাখার নুর আহমদ নামে একজন। তার কথা মতে ৪ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়। নুর আহমদের বাড়ি মহেশখালী উপজেলার হোয়ানকের টাইম বাজারে। চেক হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নুর আহমদ নামক ওই ব্যক্তি ৪ লক্ষ টাকা আদায় করেন। এ লেনদেন নিয়ে নুর আহমদ ও ভূমির মালিক নুরুল ইসলাম-খালেদা বেগম স্বামী স্ত্রী দম্পতির মধ্যে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ২০২১ সালের ১ জুন স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে ২য় পক্ষ নুর আহমদ অঙ্গীকারে বলেছেন, আমি এলএ শাখা থেকে পৃথক দুটি চেক প্রস্তত করিয়ে দিব। আমি এ লেনদেনের ক্ষেত্রে ৪ লক্ষ টাকা চুক্তিনামার গ্রহীতার কাছ থেকে বুঝিয়ে নিলাম।

এ ব্যাপারে নুরুল ইসলাম জানান, ২০১৫-১৬ সালে অধিগ্রহণ মামলা হয়েছে। সেই সময় থেকে টাকার জন্য দৌড়ঝাপ করছি। কিন্তু কোন সুরাহা পাইনি। কক্সবাজার আসা যাওয়ার সময় নুর আহমদকে এলএ অফিসে নিয়মিত দেখি। তিনি সেখানে মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকার অধিগ্রহণ নিয়ে কাজ করতে দেখেছি। তার বাড়ি মহেশখালী হোয়ানকে। ওই সুবাধে আমাদের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে ১২ লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তরের কথায় আমরা রাজি হই। ৬০ শতক জমি নৌঘাটিতে পড়েছে আমার। ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছি। নোটারিতে টাকা হলফনামা করে নুর আহমদ আমরা স্বামী-স্ত্রীর কাছ থেকে এ টাকা নিয়েছে। মূলত কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে এ টাকা নিয়েছে। এখন তার সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই। নিশ্চিত প্রতারিত হয়েছি আমরা। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। আমি সরকার ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিনয়ের সহিত দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। এতবড় ভোগান্তির পর আবার প্রতারনায় পড়েছি দালাল চক্রের হাতে। অধিগ্রহণের চেক ছাড় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। প্রতারক নুর আহমদকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত নুর আহমদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তার মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত: